Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

বাল্যবিবাহ রোধে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে- ইউএনও

প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গভীর রাতে বাল্যবিবাহ দেওয়ার চেষ্টা চলছিলো। খবর পেয়ে সাথে সাথে হাজির হোন সেই মেয়েটির বাসায়। স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে পা...

প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গভীর রাতে বাল্যবিবাহ দেওয়ার চেষ্টা চলছিলো। খবর পেয়ে সাথে সাথে হাজির হোন সেই মেয়েটির বাসায়। স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে পারেন মাত্র ১৩ বছরের বয়সের বাল্যবিবাহের শিকার হতে যাচ্ছে একটি ফুটফুটে মেয়ে। মেয়েটির অভিভাবক বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছেন।

মেয়ে ও মেয়ের অভিভাবকদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে এবং এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে জানালে তারা তাদের ভুল স্বীকার করেন। মেয়েকে ১৮ বছর পূর্ণ হবার পূর্বে বিয়ে দেবেন না মর্মে মুচলেকা প্রদান করেন। মেয়েটির পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহায়তার আশ্বাস প্রদান করা হয়। এভাবেই দেশের অধিকাংশ জেলা উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন।

এরই ধারাবাহিকতায় জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে অভিভাবকদের কিছু সীমাবদ্ধতা খুঁজে পান এবং সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা দেন।

বৃহস্পতিবার রাতে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অভিভাবকদের সচেতন নিয়ে একটি বার্তা পোস্ট করলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পরে নেটিজেনদের কাছে। অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতার জন্য  পোস্টটি শেয়ারও করেছেন কেউ কেউ। 

বাল্য বিয়ের কারণ হিসেবে অভিভাবকরা যা বলেন, তিনি তা তুলে ধরে লিখেছেন, আর্থিক সক্ষমতা, বাবার মৃত্যু বা কোন ছেলে অভিভাবক নাই, মেয়ে নিজেই কোন সম্পর্ক করেছে সেখানেই বিয়ে দিচ্ছি বা সেটা বন্ধের জন্য আরেক জায়গায় বিয়ে দেয়া

এই তিনটি সমস্যা অবশ্যই বাস্তবিক। 

কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কি বিয়ে? বরং অপরিণত বয়সের আবেগী  চিন্তার একজন কিশোরীকে বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আরো বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছেন না তো? 

প্রথমত, পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন অথচ সেই বিয়েতে রীতিমতো প্যান্ডেল টানিয়ে ডেকোরেটর ভাড়া করে চেয়ার টেবিল এনে বিয়ে দিচ্ছেন যেখানে ৫০জনের বরযাত্রী এসেছে ২টা মাইক্রো আর ২টা কার ভাড়া করে। এই অর্থটা নিশ্চয় ধার দেনা- লোন করেই এনেছেন, তো সেটার অর্ধেক দিয়ে মেয়েকে একটা কাজ শেখাতেন। পরিবারের উপকার সাথে মেয়েরও উপকার হতো। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ধরণের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। শিক্ষার জন্য সহযোগিতা নিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, বাবার মৃত্যু বা পুরুষ অভিভাবক না থাকা- এটার কথা বলেন খুব কম পরিবার কারণ বাংলাদেশে গ্রামে আসলে আর যাই হোক অভিভাবকের অভাব হয়না। বিশেষত অকাজের বুদ্ধিদাতা অভিভাবক তো শত শত।কিন্তু আপনার এই কিশোরী মেয়ে যখন সংসারের বাস্তবতা আর মানতে না পেরে সেই বিয়ে ভেঙে চলে আসে তখন এসব অভিভাবকের খোঁজ পাবেন না।

তৃতীয়ত, সবচেয়ে বাজে কারণ মেয়ে সম্পর্ক করছে - ছেলে মেয়ে যাই হোক একদিনে হটাৎ করে ইঁচড়েপাকা হয়না। আপনার সন্তান হটাৎ করে একদিনে একজনের সাথে সম্পর্ক করেনা, একদিনের সম্পর্কে বের হয়ে যায়না।তাই আপনার কিশোর -কিশোরী সন্তানকে যথাযথ নজরে রাখেন। তার বয়:সন্ধিকালে কাদের সাথে মিশছে সেটা খেয়াল করুন।অযথা তাদের হাতে স্মার্ট ফোন বা কোন প্রকার মোবাইল ফোন সেট দেবেন না। সঠিক সময়ে স্কুলে যায় কিনা তা খেয়াল করুন।

বর্তমান কিশোর-কিশোরীরা আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।তাদের বাবা মা হিসেবে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সেটা না করে বাল্য বিয়ে দেয়াকে সমাধান ভাবলে বিষয়টা হয় "মাথা ব্যথা হলে ঔষধ না খেয়ে মাথা কেটে ফেলার মত"। 

"বাল্যবিবাহ- মাদক - হেলমেট ও লাইসেন্স ছাড়া বাইক চালানো" মোটামুটি এই তিন সমস্যা আমাদের তরুণ-যুবক-কিশোর-কিশোরীদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।

ইউএনও'র পোস্টের কমেন্টে রাকিবুল রাকিব লিখেন অভিভাবকদের আগে থেকেই সচেতন থাকা জরুরি। সন্তানদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। অভিভাবকেরা আগে থেকেই মেয়েদের খোঁজখবর  রাখবেনা, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেনা। অথচ সঙ্গদোষে অথবা প্রেমঘটিত কিছু করে ফেললেই মান-সম্মানের দোহাই দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। এক্ষেত্রে নিজের মেয়ের জীবনে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে অভিভাবকেরা একটুও ভাবেনা।

কালাই গ্রাজুয়েট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ বগুড়া এর সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ মিয়া লিখেন বাল্যবিবাহ নিয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চমৎকার পর্যবেক্ষন। পাশাপাশি বাবা-মায়েরা মেয়েকে বোঝা মনে করেন। এই জায়গা থেকে অভিভাবকদের সরিয়ে আসতে হবে। সামর্থ্য কম তাই তাদের স্বপ্ন ছোট। এলাকায় ক্ষুদ্র -কুটির শিল্প, কৃষি নির্ভর শিল্পের প্রসার হলে মানুষের চিন্তা-চেতনার কিছুটা পরিবর্তন হবে।

কালাই সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দীনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, রাত নেই দিন নেই, বৃষ্টি কিংবা রৌদ্র যেখান থেকে বাল্যবিবাহের খবর আসে সেখানেই তিনি হাজির হয়ে মেয়ের পরিবারকে বুঝিয়ে বাল্যবিবাহ থেকে ফিরিয়ে আনেন তিনি। তেমনি একজন কিশোরী ফিরে পেল তার নতুন জীবন। ভবিষ্যতে তারা পড়াশোনা শেষ করে দেশ গড়ার কারিগর হবে। আমরা আমাদের ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সবসময় পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে আসছি।

শিশুদের ঝরে পড়া আর মেয়েদের অকালে বিবাহ বন্ধ করার লক্ষ্যে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান ইউএনও। এমতাবস্থায় জেলা ও উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, সুশীল সমাজসহ তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষিত যুবকেরা বাল্যবিবাহ রোধে উপজেলায় ইউএনও'র পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

আব্দুন নুর নাহিদ।

 

কোন মন্তব্য নেই

Ads Place