গতকাল শনিবার জয়পুরহাট সদর থানা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পক্ষে-বিপক্ষে আনন্দ ও প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে জেলার কালাইয়ে রোববার দুপু...
গতকাল শনিবার জয়পুরহাট সদর থানা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পক্ষে-বিপক্ষে আনন্দ ও প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে জেলার কালাইয়ে রোববার দুপুরে বিএনপির বিবদমান দুটি গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন কালাই থানা বিএনপির আহবায়ক ইব্রাহিম হোসেন। তিনি জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেন গ্রুপের সমর্থক। আর অপরপক্ষে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার। তিনি জয়পুরহাট শহর বিএনপির আহবায়ক মতিয়র রহমান গ্রুপের সমর্থক।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান পুলিশ এবং সেনা সদস্যের উপস্থিতিতে উদ্ভূত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইউএনও, পুলিশ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর শুক্রবার রাত আটটা থেকে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের ভোট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনের বাসায় ভোট নেওয়া হয়। এতে জয়পুরহাট সদর উপজেলা শাখার সভাপতি পদে হেনা কবির ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু বক্কর সিদ্দিক নির্বাচিত হন। আর শহর বিএনপির সভাপতি পদে অধ্যাপক আমিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু রায়হান উজ্জল প্রধান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া একই সাথে সদর উপজেলা ও শহর শাখার দুজন করে মোট চারজন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তবে দলটির মতিয়র রহমান পক্ষের নেতাদের কাউকে কাউন্সিলে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এরই প্রতিবাদে দলটির ওই পক্ষের নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে এর বিপক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার বিকেলে জেলার কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আনিসুর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেন মতিয়র রহমান পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা। একই উদ্দেশ্যে আজ রোববার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করার জন্য বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মতিয়র রহমান পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হচ্ছিল।
অন্যদিকে, কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে বিজয়ীদের সমর্থনে আনন্দ মিছিলের জন্য জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেন গ্রুপের সমর্থকরা জড়ো হতে থাকে।
দুই গ্রুপের পক্ষে বিপক্ষে মিছিলকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষ মারমুখি হতে থাকে। খবর পেয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইব্রাহিম হোসেন আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতির কথা অস্বীকার করে জানান, বরাবরের মতো রোববার দুপুরে কালাই তুলাপট্টি এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন তিনি। তাঁর সাথে দেখা করতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হতে থাকে। এর বেশি কিছু নয়।
জেলা বিএনপির সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার জানান, জয়পুরহাট সদর থানা ও পৌর বিএনপির একতরফা নতুন কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে আজ রোববার সন্ধ্যায় তাঁদের মশাল মিছিল হওয়ার কথা ছিল। সে জন্য কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হচ্ছিল। কিন্তু তাঁদের সেই কর্মসূচি বানচাল করতে ইব্রাহিম হোসেন তাঁর লোকজনকে তুলাপট্টি এলাকায় সমবেত করে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শামীমা আক্তার জাহান বলেন, আজ দুপুরে ওসির মাধ্যমে বিএনপির দু পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কথা জানতে পারি। এরপর দুপক্ষের নেতাদের সাথে কথা বলি। এরপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কালাই পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মো. আতাউর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই