দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রকার ভেদে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আমদানিক...
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রকার ভেদে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে অতি বৃষ্টি আর ভেপসা গরমে এসব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে, এতে অনেক লোকসানও গুনতে হচ্ছে আমাদের। এদিকে নষ্ট পেঁয়াজ ফেলে দিতে হচ্ছে। ফেলে দেওয়া পেঁয়াজ খাচ্ছে গবাদিপশু। আবার কুড়িয়ে নিয়ে তা ব্যবহার করছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে হিলি বন্দরের বিভিন্ন আড়ৎ ঘুরে দেখা যায়, আড়ৎগুলোতে বস্তায় বস্তায় খামাল দেওয়া আছে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজের মধ্যে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার আড়তে বাছায় করা হচ্ছে ভাল আর মন্দ এসব পেঁয়াজ। বাছাইকৃত পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন দরে। নষ্ট পেঁয়াজগুলো ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফেলে দেওয়া পচা পেঁয়াজ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়, দুষিত হচ্ছে পরিবেশ।
আড়গুলোতে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। ৫০ কেজির পচা পেঁয়াজের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। আর একটু ভাল মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।
কাস্টমস তথ্যমতে চলতি সপ্তাহের গত চারদিনে ১১২ ট্রাকে ৩ হাজার ২৪৪ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এই বন্দরে।
পাইকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, একেবারে নষ্ট পেঁয়াজ গতকাল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বস্তা হিসেবে কিনেছিলাম। সেগুলো বাছাই করে রোদে শুকাচ্ছি, দেখি তাতে কিছু লাভ বেড় হয় কি?
ঘোড়াঘাট থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার সোহরাব হোসেন বলেন, আমি হিলির বিভিন্ন আড়ৎ থেকে পেঁয়াজ পাইকারি কিনে নিজ এলাকায় ব্যবসা করি। কিন্তু কয়েকদিন থেকে পেঁয়াজের মান খুবি খারাপ। আড়তে প্রায় পেঁয়াজ নষ্ট, ভাল পেঁয়াজ কিনে দেখা যায় ভিতরে খারাপ। আমি আজ ৮০ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারি কিনলা। তবে ভিতরে অনেক খারাপ আছে, এই পেঁয়াজ আমার লোস হবে।
পচা পেঁয়াজ কুড়াতে আসা আনোয়ারা বেওয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ, পেঁয়াজের দাম অনেক। এখানে পেঁয়াজগুলো পড়ে আছে, নষ্ট পেঁয়াজ। এরমধ্যে বেছে বেছে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে নিয়ে শুকিয়ে রান্না করবো।
পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদ ইলাম বলেন, ভারত থেকে এই বন্দরে পেঁয়াজের ট্রাক আসতে সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৭দিন। ভারতে টানা বর্ষায় কয়েকদিন থেকে আমদানি করা আমাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
পেঁয়াজ আমদানিকারক নুর-ইসলাম বলেন, কিছুদিন থেকে ভারতের বৃষ্টি হচ্ছে। আর পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ভারতের অনেক দুর থেকে আসে। টানা বৃষ্টি আর ভেপসা গরমে ট্রাকের ভিতরে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ ৩ থেকে ৮০ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারি বিক্রি করছি।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি কারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, বর্তমান হিলি বন্দরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজের মান তেমন ভাল না। ভারতে টানা বৃষ্টি ও ট্রাকে তিপল দিয়ে ঢাকার কারণে এবং মোকামগুলোর দুরত্ব অনেক, যার কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা সফিউল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক আছে। চলতি সপ্তাহের ২৬ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর গত চারদিনে এই বন্দরে ১১২টি ট্রাকে ৩২৪৪ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৯৭ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ টাকা। টনপ্রতি ৪১০ ডলারে এসব পেঁয়াজ আমদানি করছেন আমদানি কারকরা। যেহেতু এগুলো কাঁচা পণ্য সেহেতু কাস্টমসের সকল কার্যক্রম দ্রুত সমাধান করে পণ্যগুলো ছাড় করে দেওয়া হচ্ছে।
মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম।
কোন মন্তব্য নেই