বাংলাদেশের দ্বিতীয় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শূণ্যকোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক ...
বাংলাদেশের দ্বিতীয় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শূণ্যকোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এবন্দরে প্রবেশ করতো। বর্তমান মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি পণ্যবাহী ট্রাক এই বন্দরে প্রবেশ করছে। এতে করে চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে শ্রমিকেরা।
১৯৮৬ সালে প্রথম তৈরি হয় হিলি স্থলবন্দর। ২০০৭ সালে তা দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর হিসেবে রুপ পাই এবং তৈরি হয় এই বন্দরে পানামা পোর্ট। শুরু থেকে এই পোর্টে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক ছিলো। পোর্টে ছিলো শ্রমিকদের কর্ম চাঞ্চল্যতা। প্রতিদিন এই বন্দরে প্রবেশ করতো ভারতীয় ২০০ থেকে ২৫০টি পণ্যবাহী গাড়ি। বর্তমান শূণ্যকোটায়, মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টি গাড়ি প্রবেশ করছে। এতে চরম ক্ষতিতে পড়েছে বন্দর শ্রমিকরা।
এই স্থলবন্দরে পণ্য আনলোড-লোড করার জন্য বন্দরে কাজ করে থাকে প্রায় ৫০০ শ্রমিক। প্রতিদিন তারা পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়ে থাকতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তাতে তাদের জীবন যাত্রা ছিলো স্বচ্ছল। কিন্তু বর্তমান আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় শ্রমিকরা পড়েছে বিপাকে। এখন দিনে শ্রমিকরা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আবার অনেক শ্রমিকরা বন্দর থেকে বেড় হয়ে বাঁচার তাগিদে করছেন বিভিন্ন কাজকাম।
এদিকে বন্দরকে কেন্দ্র করে হিলি শহরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গুদাম অফিস। এসব গুদামেও কাজ করে অন্যান্য শ্রমিক। আবার গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, হোটেল। আজ বন্দরে আমদানি-রপ্তানি একেবারে কমে যাওয়ায় মুখথুবড়ে পড়েছে এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
বন্দর শ্রমিক পিন্টু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই বন্দরে আমি কাজ করি। আগে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ ভারতীয় গাড়ি এই বন্দরে আসতো। বর্তমান মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি গাড়ি আসছে। আজ আমার যা ইনকাম হচ্ছে তাতে সংসার আর চলছে না। পরিবারের কোন চাহিদা পুরন করতে পারছি না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
ছাদেক সহ কয়েক জন বন্দর শ্রমিক বলেন, চার থেকে পাঁচ মাস আগে আমাদের দিনে কামাই হতো ৫০০/৬০০ টাকা। আজ ১০০/১৫০ টাকা কামাই হচ্ছে। বউ বাচ্চা নিয়ে আমরা খুবি কষ্টে আছি। কবে যে আমাদের এই বন্দর আগের মতো হবে?
হিলি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহারব হোসেন প্রতাব মল্লিক বলেন, আমাদের পানামা পোর্টের অবস্থা আজ খুবি স্বচনীয়। এর আগে প্রতিদিন এই পোর্টে ২০০ থেকে ২৮০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতো। বর্তমান সেখানে ৩০ থেকে ৪০টি ট্রাক প্রবেশ করছে। এতো অল্প পণ্য বন্দরে প্রবেশ করায় কর্তৃপক্ষ পোর্ট পরিচালনা করতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শ্রমিকরা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, দিনদিন এই বন্দরে ব্যবসা শূণ্যকোঠায় যাচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যের উপর ভারত সরকারের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ। আবার এই বন্দরেও শুল্ক বেশি নেওয়া। এছাড়াও ভারতের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। এসব কারণে দুই দেশের আমদানি কারকরা পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন এই বন্দরের প্রায় ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো, বর্তমান দিনে একটি ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। আবার যেসব ব্যবসায়ীরা এই বন্দরে পাথর আমদানি করতো, তারা এখন বেশি সুবিধা পাওয়ার কারণে দেশে অন্যান্য বন্দর থেকে পাথর আমদানি করছে। তবে আমরা দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করছি। যাতে আবারও এই বন্দরে আগের মতো আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হয়। ফিরে আসে সবার মাঝে কর্ম চাঞ্চল্যতা।
মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম।
কোন মন্তব্য নেই