এবারের এসএসসি পরীক্ষায় একটি প্রতিষ্ঠানে ১৩ জন শিক্ষকের মাত্র ৬ জন ছাত্রী হলেও তার মধ্যে ৩ জনই অকৃতকার্য হয়েছে। আবার অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ১০...
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় একটি প্রতিষ্ঠানে ১৩ জন শিক্ষকের মাত্র ৬ জন ছাত্রী হলেও তার মধ্যে ৩ জনই অকৃতকার্য হয়েছে। আবার অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন শিক্ষকের বিপরীতে ৪ জন শিক্ষার্থী হলেও তার মধ্যেও একজন অকৃতকার্য।
সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এমন ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো সড়াইল মহিলা দাখিল মাদ্রাসা ও কাপাস ঠিকরি দাখিল মাদ্রাসা।
সড়াইল মহিলা দাখিল মাদ্রাসাটি উপজেলার তুলসীগঙ্গা ইউনিয়নে সড়াইল গ্রামে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানটি ২০০১ সালে একাডেমি কার্যক্রমের অনুমতি পায়। অন্যদিকে কাপাস ঠিকরি দাখিল মাদ্রাসা উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের কাপাস ঠিকরি গ্রামে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করলেও বিদ্যালয় দুটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, সড়াইল মহিলা দাখিল মাদ্রাসাটি যেখানে অবস্থিত তার পাশেই আটি দাশড়া উচ্চ বিদ্যালয়, আটি দাশড়া মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আটি দাশড়া ঘুঘইল দাখিল মাদ্রাসা অবস্থিত। এর মধ্যে দুটিই এমপিওভুক্ত এবং সুনামধন্য। যার ফলে অভিভাবকরা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে ননএমপিও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে চান না। আবার ননএমপিও হওয়ার ফলে শিক্ষকরাও তেমন নিয়মিত নয়। শুধুমাত্র কাগজ কলমেই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব রয়েছে। বাস্তবে শুধু জীর্ণ শীর্ণ টিনসেড ঘর। বেতন ভাতা না থাকলে কত দিনই বা এমন বিনা পরিশ্রমিকে কাজ করবে তাঁরা। গত কয়েকবছর থেকে স্কুলটি জীর্ণ শীর্ণ এবং বন্ধ হয়ে আছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কাগজ কলমে শিক্ষার্থী থাকার কথা বললেও স্থানীয় বলছে কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের মাদ্রাসায় দেখেননি কেউ।
কাপাস ঠিকরি দাখিল মাদ্রাসার স্থানীয়রা বলছেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক কর্মচারীরা তেমন নিয়মিত নয়। বেতন ভাতা না পাওয়ায় বেশিরভাগ কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে আসেনা। কেউ কেউ আবার ঢাকায় রিকশা চালায়। শিক্ষকদেরও একই অবস্থা। কেউ আসে কেউ আসেনা। দু একজন আসলেও কোন ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থী সংখ্যাও আশানুরূপ নয়। প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ধরে রাখতে নামে বেনামে শিক্ষার্থীও রাখতে হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। যেসব শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয় তারাও খুব ভাল শিক্ষার্থী নয়। এর মধ্যে ঝরে পড়া, বিয়ে হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীও আছে। কিছু ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে স্কুলের অস্তিত্ব প্রমাণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিক্ষানুরাগী বলেন, ব্যাঙের ছাতার মত শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়লেই হবেনা। সেই প্রতিষ্ঠান আদেও আলোর মুখ দেখবে কিনা! প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে কোনমতে পরীক্ষায় বসালেই হবেনা। তাদের সঠিক শিক্ষাও দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবেনা। সরকারই বা কেন তাদের এমপিওভুক্ত করবে?! সরকারের উচিত যেসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা হয়, যথেষ্ট শিক্ষার্থী আছে এমপিও হওয়ার যোগ্য সেসব প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করা এবং যেসব প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র কাগজ কলমেই আছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা উচিত।
সরাইল মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আজমল হোসেন বলেন, এবার ৬ জন পরীক্ষা দিয়েছিল ৩ জন পাস। এখন পর্যন্ত এমপিও হয়নি। খুব কষ্ট করে আমরা প্রতিষ্ঠান চালাই। ১৯ জনের মত শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া আছে। তবে বিল বেতন না হওয়ায় অনেক গরিব শিক্ষক কর্মচারী আছে তারা ঢাকায় গিয়ে রিক্সা চালায়। নিয়মিত শিক্ষক ১৩ জন। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পযর্ন্ত শিক্ষার্থী ১৫০ জনের মত।
কাপাস ঠিকরি দাখিল মাদ্রাসার সুপার লিটন আলী বলেন, ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪ জন পরীক্ষা দিয়েছিল, ৩ জন পাস। বিল বেতন নাই কিছু শিক্ষক আছে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পযর্ন্ত ১০ জন। এবতেদায়ী ৪ জন। মোট ১৪ জন। শিক্ষার্থী ২০০ জনের মত তবে নিয়মিত আসেনা।
উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার বাবুল কুমার মন্ডল বলেন, এত দিন থেকে বিনা বেতনে চাকরি করা কষ্টকর। জরিপ করে প্রতিষ্ঠান গুলোর সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয়তা নিরুপন করা প্রয়োজন। আমরা উর্ধ্বতন কর্মকতাদের বিষয়টি অবগত করবো।
মোঃ আমানুল্লাহ আমান।
কোন মন্তব্য নেই