জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে জেএমবি'র সাজাপ্রাপ্ত নেতা মন্তেজার রহমানের লাশ ও লাশ দাফনের ছবি নিতে গেলে যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুল আলীমে...
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে জেএমবি'র সাজাপ্রাপ্ত নেতা মন্তেজার রহমানের লাশ ও লাশ দাফনের ছবি নিতে গেলে যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুল আলীমের উপর হামলা ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে ক্ষেতলাল থানায় একটি জিডি করেছেন তিনি।
জিডি সুত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে পুলিশের উপর জেএমবির হামলার ঘটনায় আসামী জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আ. রহমান ও বাংলা ভাইয়ের অন্যতম সহযোগী জঙ্গি নেতা মন্তেজার রহমান ২০০৭ সাল থেকে কারাগারে আটক ছিলেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে হার্ট-কিডনি-প্রেসারসহ জটিল রোগে ভূগছিলেন। গত সোমবার তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত ২৫০ শয্যার জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কারা তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। তিনি মঙ্গলবার দুপুর দুইটার পর চিকিৎসাধীনবস্থায় মারা যান। গত বুধবার (১৫ মে) বিকেলে তার লাশ বাড়িতে আনা হলে উৎসুক জনতা ভিড় করে। সেখানে যমুনা টিভির রিপোর্টার আব্দুল আলীম ও নাগরিক টিভির জেলা প্রতিনিধি মাহফুজার রহমান সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের বাঁধা দেয়া হয় এবং যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুল আলীম পরিচয় দেয়ার পরেও তার উপর আক্রমন করে। এসময় কয়েকজন গালিগালাজ করে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এঘটনায় ওই রিপোর্টার ক্ষেতলাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে ক্ষেতলালের উত্তর মহেশপুর গ্রামে জঙ্গি নেতা মন্তেজারের বাড়িতে জেএমবির শীর্ষ নেতারা গোপনে বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে রাতেই বাড়িটি ঘেরাও করে জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জেএমবির সদস্যরা সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল শফিসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে গুরুতর জখম করে ৩টি শটগান, ৪৫টি গুলি ও ১টি ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেন। ওই রাতে ১৯ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম ক্ষেতলাল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে অস্ত্র লুট, পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে জখম ও মারপিটের অভিযোগ করা হয়।
ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩ আসামি ২০০৪ সালের বিভিন্ন সময়ে আদালত থেকে জামিন পান। এরপর থেকেই তাঁরা পলাতক। ২০০৭ সাল থেকে মন্তেজার রহমান কারাগারে ছিলেন। এ ছাড়া আসামি শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এবং একজন মারা গেছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দিনাজপুর অঞ্চলের পরিদর্শক জালাল উদ্দীন মামলাটি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ৬০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু হামলার সময় আসামি মন্তেজারের বাড়ির পাশে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হলেও বিস্ফোরক আইনে কোনো মামলা করেনি পুলিশ। এ জন্য ২০০৯ সালের ১২ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সিআইডিকে মামলাটি আবার তদন্তের আদেশ দেন। সিআইডির দিনাজপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার শেখ আহসান-উল কবীর অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করে ২০১০ সালের ২৫ মে ওই ৬০ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আদালতে পৃথক আরেকটি অভিযোগপত্র দেন। দুটি মামলার চার্জ গঠন ও বিচার কাজ শুরু হয়েছে বলে জয়পুরহাট আদালতের পুলিশ পরির্দশক আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন।
ক্ষেতলাল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ইমায়েদুল জাহেদী বলেন, সাংবাদিককে হত্যা ও হুমকির জিডি গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোঃ আমানুল্লাহ আমান।
কোন মন্তব্য নেই