জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামে ফসল নষ্ট করে, জমির মাটি কেটে, হারাবতী নদীর গতিপথ পরিবর্তনের অপচেষ্টা করা হচ্...
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামে ফসল নষ্ট করে, জমির মাটি কেটে, হারাবতী নদীর গতিপথ পরিবর্তনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ওই নদী সংলগ্ন একটি কবরস্থানের ভাঙ্গন রোধে রহমতপুর গ্রামবাসীরা এই কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই নদীর পূর্ব পাড়ের ওপরে থাকা প্রায় দুবিঘা জমি আবাদসহ খনন করা হবে। ইতোমধ্যে ১০-১২ শতক জমির ফসল নষ্ট করে মাটি খনন করা হয়েছে। কিন্তু আবাদি ওই জমিগুলো নষ্ট করে এবং নদীটির গতিপথ বদল করেও এর ভাঙ্গন ঠেকানো যাবেনা। ফলে কবরস্থানের ভাঙ্গন ঠেকানো যাবেনা। তবে গাইড ওয়াল দিলে কবরস্থানের হেফাজত হবে। এমন মন্তব্য করেছেন আবাদি জমির ভোগ দখলকারী ব্যক্তিরা।
গত বৃহস্পতিবার দুপরে সরেজমিন ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রহমতপুর গ্রামের পূর্ব পাশের একটি কবর স্থান ঘেঁষে বয়ে গেছে হারাবতী নদী। অ্যাস্কেবেটর (ভেকু মেশিন) লাগিয়ে কবর স্থান সংলগ্ন হারাবতী নদীর গতি পথে মাটি ফেলা হয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার লক্ষ্যে ভেকু মেশিন দিয়ে নদী পাড়ে ওপর ফসলসহ জমি খনন করা হয়। এতে নদীটির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
রহমতপুর গ্রামের ভুক্তভোগী ইব্রাহিম হোসেন, মুকুল হোসেন, সাদ্দাম হোসেন এবং হুমায়ুন অভিযোগ তুলে জানান, হারাবতী নদীর পূর্ব পাড়ের ওপরের প্রায় দুবিঘা জমি তাঁরা চাষাববাদ করছেন। প্রায় ৭০ বছর আগে থেকে তাঁদের বাপ-দাদারাও এই জমিগুলো চাষাবাদ করে আসছেন। এতে সরকারিভাবে কোন বাধাও আসেনি। ওই জমিগুলোতে ফসল ফলিয়ে তাঁরা প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন। এটি তাঁদের জীবন-জীবিকার অংশ। এ অবস্থায় গত বুধবার হঠাৎ করেই নদীটির গতিপথ পাল্টাতে ভেকু মেশিন দিয়ে তাঁদের ভোগদখলে থাকা আবাদি জমিতে খনন কাজ শুরু করা হয়।
তাঁরা আরও জানান, যাঁরা এ কাজ করছেন তাঁরা রহমতপুর গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই তাঁরা ভয়ে তাঁদের কাজে বাধা দেননি। কোথাও লিখিত অভিযোগও করেননি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বুধবার সকালে এসে নদীর গতিপথ বদলানোর কাজে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনো কথাই আমলে নেননি। পরে ওই দিন দুপুরে পাঁচবিবি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসে কাজ বন্ধ করে দেন।
আবাদি জমি খননকরীরা জানান, তাঁরা গ্রামের কবরস্থানের ভাঙ্গন বন্ধ করতেই নদীটির গতিপথ ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। এই জমি খননের মাটি দিয়ে কবরস্থান সংস্কার করা হবে।
কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফরিদুল হোসেন সরকার জানান, হারাবতী নদীর পাড় ঘেঁষে সরকারি জায়গায় রহমতপুর গ্রামবাসীর প্রায় তিন একর আয়তনের একটি কবরস্থান আছে। কবরস্থানটির কিছু অংশ ভেঙ্গে হারাবতী নদীর গর্ভে গেছে। ভবিষ্যতে যাতে এ কবরস্থানটি আর না ভাঙ্গে তাই তাঁর নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কবরস্থান সংস্কারে হাত দিয়েছেন। নদীর গতিপথ ঠিক থাকলে কবরস্থান আবারও ভাঙতে থাকবে। তাই আবাদি জমির মাটি খনন করেই নদীর গতিপথ পাল্টানো হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনে ফসলের মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে গত বুধবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জয়পুরহাটের লোকজন এসে নদী খননের কাজ দেখে গেছেন। তাঁরা নদীর গতিপথ বন্ধ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু নদী খননের কাজ চলমান রাখার উপায় খোঁজা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট) আবু রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, হমতপুরে হারাবতি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে বুধবার সকালে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু যাঁরা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করছিলেন তাঁরা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। এ কাজের জন্য তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বা প্রশাসনের অনুমতিও নেননি।
পাঁচবিবি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, হারাবতী নদীর গতিপথ পাল্টানোর খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজটি বন্ধ করে দেই। সেই সাথে কবরস্থান রক্ষায় গ্রামবাসীকে উপজেলা পরিষদে আবেদন করতে বলেছি। যাতে নদীও বাঁচে আবার কবরস্থানও ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পায়।
মো. আতাউর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই