আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলীয় এমন সিদ্ধান্তে পাল্টে গেছে নির্বা...
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলীয় এমন সিদ্ধান্তে পাল্টে গেছে নির্বাচনী মাঠের প্রকৃত চিত্র। তৃণমূলের কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা এমন সিদ্ধান্তে খুশি হলেও দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখা সম্ভাব্য কিছু প্রার্থীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সদ্য সমাপ্ত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই দেশের অন্যান্য স্থানের মতো জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার সর্বত্র বইতে শুরু করেছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া। কে হবেন এবার উপজেলা চেয়ারম্যান? তা নিয়ে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস পাড়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বর্তমানে এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রচারনা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলীয় চারজন প্রার্থী। তবে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের বিষয়ে বিএনপিসহ অন্য কোন দলের প্রার্থীদের কথা এখনও জানা যাচ্ছে না।
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে জানা গেছে, আসন্ন ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে চেয়ারম্যান পদে ৪-৫ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিল। তবে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীদের নৌকায় চড়ে পার হওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। এ কারণে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পাবার জন্য যারা লবিং ও তদবিরের পাশাপাশি আগাম প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন এমন প্রার্থীদের মধ্যে কারো কারো প্রচার-প্রচারণা ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। অথচ দলের এমন সিদ্ধান্তের আগে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহন করতে ইচ্ছুক কিছু প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের মনোয়ন নিতে এবং নিজেদের বিজয়ীর বেশে দেখতে যে লবিং, তদবির শুরু করেছিলেন সে আশা এখন গুড়ে বালি হয়েছে এমন গুঞ্জন চলছে উপজেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে। তারা মনে করছেন দলীয় প্রতীক না থাকায় এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিজেদের জনপ্রিয়তা দিয়ে প্রার্থীদের বিজয়ী হতে হবে।
এবার ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকছে না এমন খবর জানার পরেও আওয়ামী লীগ দলীয় চারজন প্রার্থী মাঠে থেকে নির্বাচন করবেন বলে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। তারা হলেন, ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকিম মন্ডল, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাইফুল ইসলাম তালুকদার, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ মোল্লা এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব দুলাল মিয়া সরদার।
ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা মার্কা দিয়েছিল। বর্তমানে নির্বাচিত হয়ে আমি চেয়ারম্যান আছি। এর পূর্বেও জনগণের ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। টানা ১০ বছর ধরে জনগণের সাথে আছি। এসময় প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি পাড়ায় গিয়েছি। মানুষের সমস্যা শুনে সমাধান করেছি। হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সহযোগিতায় গ্রামীণ রাস্তাসহ সকল আইডিভুক্ত রাস্তা পাকাকরণ করেছি। যেসব কাজ অসম্পূর্ণ আছে সেসব কাজ আগামীতে সম্পূর্ণ করব। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমি কাজ করছি। নির্বাচনেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে লড়াই করবো। এখন কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি।
ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমি ইতিপূর্বে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। এবার দলীয় প্রতীক না থাকলেও নির্বাচনে আমি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী থাকবো৷ আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি এবং জণগনের ভালো সারা পাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের জাতীর কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ মোল্লা বলেন, আমারও আশা এবং প্রত্যাশা। আশা করি শান্তি প্রিয় মানুষ আমার পাশে থাকবেন। আমি চেয়ারম্যান প্রার্থী। যদি মানুষ আমাকে চায় আমিই নির্বাচিত হবো। আমি নির্বাচনে মাঠে থাকবো। মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ত্যাগী, সততা, পরিচ্ছন্ন ইত্যাদি বিবেচনা করলে জনগণ আমাকেই বেছে নিবে।
এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকছেনা এই ঘোষণা জানার পরেও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব দুলাল মিয়া সরদার পূর্বের মতোই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি গত পাঁচ বছর আগেও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। এবছর ২০২৪ সালেও আছি। জনসংযোগ করতে গিয়ে মানুষের যেভাবে সাড়া পাচ্ছি ভোটারদের এমং মা বোনদের এমন সাড়া থাকলে আমি অবশ্যই চেয়ারম্যান হবো। চেয়ারম্যান হলে এ এলাকার উন্নয়ন করব। সন্ত্রাস ও দখলদারমুক্ত উপজেলা গরবো। এদিকে সাধারণ ভোটারদের মতে, এবার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় তারা সদিচ্ছায় তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সরাসরি ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে পারবেন। সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা বলেন, অতীতে দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন ও ভবিষ্যতে থাকবেন এমন নেতাকে তারা আগামী ক্ষেতেলাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
জানা গেছে, আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সূত্র মতে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে আগামী ৪ মে। পরে ১১ মে, ১৮ মে ও ২৫ মে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট হবে। গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান।
মোঃ আমানুল্লাহ আমান ।
কোন মন্তব্য নেই