জয়পুরহাটের কালাইয়ে সক্রিয় বীজ আলুর সিন্ডিকেট, প্রতিদিন রাতের আঁধারে হিমাগারের ভেতর নামসর্বস্ব বিভিন্ন বীজ কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে মানহীন বীজ ...
জয়পুরহাটের কালাইয়ে সক্রিয় বীজ আলুর সিন্ডিকেট, প্রতিদিন রাতের আঁধারে হিমাগারের ভেতর নামসর্বস্ব বিভিন্ন বীজ কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে মানহীন বীজ আলু প্যাকেট করা হচ্ছে। অথচ প্যাকেটে দেওয়া নাম ঠিকানার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলুর দাম বেশী হওয়ায় খাবারের জন্য রাখা আলুকে বীজ হিসেবে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা মুনাফা করছেন ব্যাবসায়ীরা। অন্যদিকে এই বীজ আলু জমিতে রোপণ করলে পথে বসার আশংকা আলুচাষী কৃষকদের।
কৃষক বাঁচলে, বাঁচবে দেশ তাইতো কৃষকদের বাঁচাতে জয়পুরহাট জেলার বীজ আলুর ব্যাবসায়ী ও ডিলারদের গোডাউন তল্লাশি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বীজের মান যাচাই-বাছাই ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখবেন এমনটাই দাবি কৃষকদের।
সরেজমিনে কালাই উপজেলার বেশ কয়েটি হিমাগারে রাতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এর মধ্যে বালাইট এলাকার সালামিন ফুড নামে হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, বীজ আলুর বস্তায় মহিবুল্লা ১২-১৩, ঠাকুরগাঁ সীড, পপুলার, বাদশা সীড, সুবর্ণাসহ বিভিন্ন নাম ব্যাবহার করে লেবেল লাগিয়ে প্যাকেট করছেন শ্রমিকরা। গভীর রাতে মানহীন এসব আলুর বীজ ট্রাক দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকার আলু ব্যাবসায়ীদের গোডাউনে। শ্রমিকদের প্যাকেট করা বীজ আলুর মালিকের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বালাইট গ্রামের বজলুর রহমানের বলে জানান। এ বীজ সিন্ডিকেটের মুলহোতা বজলু রহমান প্রভাব খাটিয়ে, কতিপয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে এমন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় এসব কর্মকান্ড চালালেও কোন ব্যাবস্থা গ্রহন এবং বীজের মান যাচাই-বাছাই করেনি কতৃপক্ষ।
কালাই উপজেলার এম ইসরাত হিমাগারে রাত সাড়ে বারোটায় গিয়ে দেখা যায়, হাজারো বস্তা খাবারের জন্য রাখা আলুকে ১২-১৩ নাম দিয়ে বীজ আলু হিসেবে প্যাকেট করছেন শ্রমিকরা। এসময় আলুর মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে খবর নিয়ে দেখা গেছে এসব আলু জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মাটিঘর এলাকার একটি গুদামে মজুদ করে রেখেছেন রবি নামে এক আলু ব্যবসায়ী। এবিষয়ে ব্যবসায়ী রবির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কালাই উপজেলার একডালা গ্রামের কৃষি ব্যাংক কর্মচারী রুবেল হোসেন ও তার ভাই জুয়েল আহমেদের এম ইসরাত হিমাগারে খাবারের জন্য রাখা আলু আজ মঙ্গলবার রাত ১১.৩০ টায় বাদশা সীড ১২-১৩ নাম দিয়ে লেবেল লাগিয়ে প্যাকেট করছেন শ্রমিকরা। মুঠোফোনে রুবেলকে কল দিয়ে আলুর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেদকের সাথে দেখা করবেন বলেই ফোন কেটে দেন।
কালাই উপজেলার আলু চাষী কৃষক আল-আমীন, রাজু আহমেদ, আক্তার হোসেনসহ অনেকেই বলেন, হিমাগারে খাওয়ার জন্য রাখা আলুকে বীজ হিসেবে জমিতে লাগালে ফলন হবেনা। বীজ ভালো না হলে গাছ উঠবে না, আলু মার যাবে, কৃষকরা পথে বসবে। যারা সামান্য লাভের জন্য কৃষকদের সাথে এমন প্রতারনা করছে তাদের জেলে দেওয়া উচিত।
সালামিন ফুড হিমাগারে বীজ আলু সিন্ডিকেটের মুল হোতা, কালাই উপজেলার বালাইট গ্রামের আলু ব্যবসায়ী বজলুর রহমান বলেন, হিমাগারে যারা বীজ আলু কিনে রেখেছে তারা ব্যবসা করবেই। সব আলু আমার নয়। জিয়াসহ অনেকের আলু আছে। বাদশা সীড কোম্পানির বিভিন্ন শাখায় বীজ আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। সুবিধার্তে কালাই হিমাগারে আলুগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের বাদশা সীড আলুর বীজ প্যাকেটজাত করনে সকল কাগজপত্র আছে। অন্যগুলোর বিষয়ে জানি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট জেলার বিএডিসি'র সিনিয়র সহকারী পরিচালক বিপ্লব কুমার মহন্ত বীজ বিপণন বিভাগের কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন।
জয়পুরহাট জেলা বীজ বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, কালাই উপজেলার বিভিন্ন হিমাগারে মানহীন খাবার আলুকে বীজ হিসেবে প্যাকেট জাত করা হচ্ছে এমন তথ্য আমাদের কাছে আসলে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে উর্ধতন কর্মকর্তাকে নিয়ে জরুরী মিটিং ডাকা হয়েছে। ছক অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সস্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, রাতের আঁধারে কোন হিমাগারে যাতে বীজ আলু প্যাকেট না করা হয় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। মানহীন বীজ যেন কেউ বাজার জাত করতে না পারে সেজন্য বীজ বিভাগের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন।
মো: চঞ্চল বাবু/ডেইলি জয়পুরহাট
কোন মন্তব্য নেই