‘এই যে রোজার মাস, আইজ দিয়ে চারটি রোজা। ইফতারের সময় শুধু পানি লিয়ে ইফতার করি। আবার শেষ রাত্রে ভাত খাই শুধু শাক আর কচু দিয়ে। কোন দিন খালি পানি...
‘এই যে রোজার মাস, আইজ দিয়ে চারটি রোজা। ইফতারের সময় শুধু পানি লিয়ে ইফতার করি। আবার শেষ রাত্রে ভাত খাই শুধু শাক আর কচু দিয়ে। কোন দিন খালি পানিও খাই। মানুষের আলু কেটে দিয়ে যা দুপয়সা পাই, তা দিয়ে চাল কিনমো না কাপড় কিনমো না তরিতরকারি কিনমো না মাথার ত্যাল কিনমো।’
এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে চোখে দিয়ে পানি চলে আসে চাম্পা বেগমের (৫৫)। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার শ্রীকৃষ্টপুর মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। চিপস তৈরির জন্য আলু কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়ি পৌরসভার ভেতর। ১২-১৩ বছর হলো স্বামী মারা গেছে। এখন বিধবা মানুষ হামি। কেউ এ্যাডা কয় না কার্ড করে দিই, রিলিপ দিই। কেউ কিচ্ছু দেয় না। ইফতার করি শুধু পানি মুকত লিয়ে। মানুষের কাজ করে আর আলু কাইটে কোন রকমে দিন চলে যায়। ব্যাটা অ্যানা দোকানপাট করে খায়। ওর বউ-ছাওয়াল আছে। ওরি দিন চলে না, হামাক আবার কীভাবে দিবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাম্পার স্বামীর প্রায় ১২ বছর আগে মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি বাবার বাড়ি শ্রীকৃষ্টপুরে এসে বসবাস করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে তার। ছেলে পরিবার নিয়ে কোন রকমে সংসার চালান। আর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বাবার বাড়ি থেকে সামান্য কিছু জমি ভাগ পান চম্পা। পরে আরও কিছু জমি তার মেয়ে কিনে সেখানে ইট দিয়ে মাকে বাড়ি করে দিয়েছেন। মেয়ের করে দেওয়া বাড়িতে বসবাস করেন চাম্পা।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আবু রায়হান বলেন, চাম্পা অনেক গরিব মানুষ। দিন অ্যানা দিন খায়। অভাবে দিন যায় তার। উনার স্বামী মারা গেছেন, বাবা-মাও বেঁচে নেই। দীর্ঘদিন থেকে আলু কেটে যা রোজগার করেন তাতে কোনরকম দিন চলে তার। সচলভাবে চলতে পারেন না। সরকার থেকে তিনি কোনো অনুদান পাননি। এমনকি তাকে একটা বিধবা ভাতা কার্ডও করে দেওয়া হয়নি।
আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুল আলম চৌধুরী বলেন, আমি মেয়র পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর বিধবা বা বয়স্কভাতা কার্ডের জন্য সরকারিভাবে চাহিদা আসেনি। তাছাড়া কেউ আমার কার্যালয়ে আসলে তাকে সহযোগিতা করা হয়।
চম্পক কুমার।
কোন মন্তব্য নেই