রমজানের প্রথমদিন থেকেই ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপণ্যের দাম জয়পুরহাটের কালাইয়ের হাট-বাজাররে অস্থিতিশীল। রমজানে শুরু থেকেই প্রতিটি ইফতার সামগ্রীসহ...
রমজানের প্রথমদিন থেকেই ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপণ্যের দাম জয়পুরহাটের কালাইয়ের হাট-বাজাররে অস্থিতিশীল। রমজানে শুরু থেকেই প্রতিটি ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপণ্যের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমান উপজেলার হাট-বাজাররে বেগুন, শসা, টমেটো, লেবু, কাঁচা-মরিচ, বেসন, ছোলা, চিড়া, মুড়িসহ দাম বেড়েছে সবধরনের ইফতার সামগ্রীর। এছাড়াও বেড়েছে পেঁয়াজ, ডিম, মাংস, মাছ, রসুন, আদার ও আলু দামও। এই এলাকায় পণ্যের দাম নিয়ে প্রতিদিন বাজারে বিবাদে জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। আর ওইসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের ভোক্তারা। ক্রেতাদের দাবি, একটু একটু করে প্রতিদিনই বাড়াছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। তবে এই বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ জানিয়েছে স্থানীয় ভোক্তারা। এদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, উৎস থেকেই দৈনিক বাড়ানো হচ্ছে ডিম, মাংস, মাছ, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম।
সরেজমিনে কালাই উপজেলার উদয়পুরহাট, পুনটহাট, মাত্রাইহাট, বৈরাগীহাট, কালাই পুরোনো বাজার, মোলামগাড়ীহাট, হাতিয়রবাজার ও কালাই বাসস্ট্যান্ডে এলাকার কাঁচাবাজার, পাচঁশিরাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানে শুরু থেকেই ওইসব হাট-বাজারে দাম বেড়ে প্রতি কেজি গোল বেগুন ৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৮০ থেকে টাকা, কাঁচামরিচ ৯০ টাকা, পেঁয়াজ ৪৫টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা,আলু ৩০ টাকা, টমেটো ৫০টাকা, পটল ৬০টাকা, গাজর ৬৫ টাকা, সজিনা ১১০ টাকায়, মিষ্টি-কুমড়া ৩৫ টাকায়,বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি পিস আকার ভেদে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি রসুন ১১৫ টাকা, বেসন ৭০ টাকা, আদা ১২৫টাকা, খেসারি ডাল ১০০টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিড়া ৭৫ টাকা, মুড়ি ৮৫ টাকা, গরুর দুধ প্রতি সের ৮০ টাকায়, সাধারণ খেজুর মানভেদে ২৫০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রমজানের এই বাজারে শরবতের অপরিহার্য উপাদান লেবু। এই লেবুর দাম শুনে চোখ কপালে উঠল, প্রতি পিছের দাম ২০ টাকা। মানভেদে লেবুর হালিতে দাম পড়ছে ৭০ টাকা। আকারে ছোট কিছু লেবু মিলছে, তবে গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। আবার প্রতিটি ডাবের দাম পড়ছে ১০০-১২০ টাকা, এক হালি পাকা কলা ৪০টাকা, এক কেজি তরমুজ ৫০-৫৫ টাকা আর সাইজ হিসেবে নিলে মোটামুটি সাইজের একটি তরমুজ কিনতে গুনতে হচ্ছিল ৪৫০ টাকা কিংবা তারও বেশি। এদিকে আমদানি করা নানা ফলেরও কেজিতে বেড়েছে ৫০টাকা।
অথচ রমজানের আগের দিনেও প্রতি কেজি বেগুন ২০ টাকা, শসা ১৫, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, সজিনা ৭০ টাকায়, মিষ্টি-কুমড়া ১০ টাকায়, প্রতি পিছের লেবু দাম ৫ টাকা, প্রতি কেজি আলু ১৫, বেসন ৫০, খেসারি ডাল ৬৫ ছোলা ৭০, চিড়া ৫৫ মুড়ি ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর সাধারণ খেজুর মানভেদে ১২০ থেকে শুরু করে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। যেসব ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপণ্যের দাম রোজা শুরুর আগে যেদামে বিক্রি হচ্ছিল তা রমজানের প্রথমদিনেই হঠাৎ করে বেড়ে দিয়ে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। বর্তমান বাজারে রমজানকে কেন্দ্র করে ডিম মাছ, মাংসসহ সবধরনের সবজি দাম এখন আকাশচুম্বি। বাজারে ক্রেতারা তাদের চাহিদা মত পণ্য কিনতে না পেরে দিশেহারা। ক্রেতারা একই দোকানে বার বার ভিড় করে পণ্যের দরদাম কষছেন। কম দামে পণ্য কিনতে না পেরে হতাশাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের ভোক্তারা।
বৈরাগীহাটে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা মোছা. রিতা বেগম বলেন, বেগুন, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা-মরিচ, আদা, বেসন, ছোলা, শসা, টমেটো, নিয়মিতই কিনেছি। কিন্তু রোজার দিন থেকেই ঐসব দাম সবকুছুতেই অনেক বেশি।
সেখানে আরেকজন বাজার করতে আসা কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, রমজানের আগের দিনেও বাজার করেছি। কিন্তু এখন হঠাৎ শুনি সবকিছুরই দাম বেশি। এটা আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খুবই কষ্টের। প্রতিদিন হঠাৎ হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নিম্নআয়ের মানুষেরা বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ছেন।
উপজেলার হাট-বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, বিদেশি মুরগির লাল ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়। হাঁসের ডিমের হালি এখন ৯০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। ওদিকে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। ওদিকে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, যেখানে সোনালী (কক) মুরগি ৩৫০ টাকা ও লেয়ার মুরগি কেজি ৩৩০ টাকা। এদিকে হাট-বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, মাগুর মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, হাঙ্গেরি মাছ প্রতি কেজি ২০৫ টাকায়, প্রতি কেজি শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫১০ টাকায়, মৃগেল প্রতি কেজি ২২৫ টাকায়, পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, কৈ দেশি প্রতি কেজি ৫৫০, ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১২০০ টাকা, কাতল প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, সিলভার কার্প প্রতি কেজি ১৭০ টাকায়, বিগহেট প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়, পুটিকাপ প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় ও বাটা-মাছ প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তীত আছে কাটারী চাল ৬৮, নাজিরশাল ৭০, উনপঞ্চাশ চাল ৫৫ আটাশ চাল ৫৩, সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা, সুপার তেল ১৫০ টাকা ও সরিষা তেল ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কালাই পাচঁশিরাবাজারে সবজি ব্যবসায়ী ছানোয়ার হোসেন বলেন, বেগুন, আলু, শসা, টমেটো, লেবু, কাঁচা-মরিচসহ প্রতিটি সবজিতে কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা বেড়েছে। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় বাড়ছে দাম। তাছাড়া পাইকারি কিনতে বেশি হওয়ায় আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি।
কালাই বাসস্ট্যান্ডে এলাকার মুদি দোকানি সজীব বলেন, আমাদের তো কোন উপায় নেই। আমরা পাইকারি দোকান থেকে যে দামে পণ্যে কিনছি তার থেকে লাভ্যংশ হিসাব করে বিক্রি করছি। এখন আমাদের কিছু লাভ তো করতে হবে। তবে কেউ কেউ ই”ছাকৃত দাম বৃদ্ধি করার পায়তারা করে এটা সত্যি।
উপজেলার মাত্রাইহাটে বাজার করতে আসেন রেসমা। তিনি বলেন, আমি সাধারণ একজন নারী শ্রমিক। বর্তমান সংসার চালানোর অনেক কঠিন হচ্ছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিন বাড়ছে, সেই হিসেবে আমাদের আয় বাড়ে না। ই”ছা করলেও ভালা-মন্দ খাওয়ার উপায় নেই। তাই কিছু সবজি ও মাছ কিনলাম।
কালাই বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় বাজারে আসা ভ্যানচালক এনামুল হক বলেন, রমজান মাসের শুরতেই ইফতারীসহ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে এমনিতেই বিপদে আছি অথচ এসময় ইফতারীসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
পুনটহাটে বাজারে আসা এক বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক রাইহান ইসলাম বলেন, নিত্যপণ্যের উ”চমূল্যের কারণে ভোক্তারা খুব কষ্টে আছে। সাধারণ মানুষের জীবনমানে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলার প্রশাসনকে জোরালো চেষ্টা করতে হবে এবং বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে।
এই বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা তিথি বলেন, প্রতিনিয়ত বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে নানা সচেতনতা বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। উপজেলার হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণে জন্য আরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরপরও যারা দ্রব্যমূল্যের লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার লায়নর।
কোন মন্তব্য নেই