জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২২ দিবসে উপস্থিত না থাকা সহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ব...
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২২ দিবসে উপস্থিত না থাকা সহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে। প্রায় অফিসে উপস্থিত থাকেন না তিনি। পিয়ন ও অফিসের হিসাব রক্ষক দ্বারাই অফিসের সকল কাজ করে নিতে হয়, এমনটিই অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিক অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি, বলছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
জানা যায়, গত শনিবার সারাদেশের ন্যায় হাকিমপুর উপজেলাতেও পালিত হয়েছে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২। উক্ত দিবসের আয়োজক হয়ে থাকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। কিন্তু হাকিমপুর উপজেলায় এই আয়োজক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না। তিনি না থাকায় ব্যাহত হয় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের সকল কার্যক্রম। এছাড়াও পরের দিন রবিবারেও অফিসে উপস্থিত হননি তিনি।
২০১৭ সালে হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন এই অফিসার বোরহান উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই এলোমেলো ভাবে অফিস করা এবং অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত থাকেন এই শিক্ষা অফিসার। দিনের পর পর দিন ধর্ণা দিয়েও শিক্ষকদের মেলে না তার দেখা। পিয়ন আর অফিস সহকারীরাই করে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সকল কাজ। তবে বেশির ভাগ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকেন এই বোরহান উদ্দিন।
আরও জানা যায়, এর আগেও একাধিক বার তার অনিয়ম-দুর্নীতি বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগীরা। খেয়াল-খুশি মতোই চলে আসছে তার চলাফেরা।
ভুক্তভোগী বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, উনি তো একজন বাজে শিক্ষা অফিসার, উনার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। মাসেও ঠিক মতো অফিস করেন না। পিয়ন আর অফিসের হিসাব রক্ষক দ্বারা সকল কাজ করে নিতে হয়। একটা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ দিবসেও তিনি উপস্থিত থাকে না?
হিলি রাউতারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নুরুল আলম বলেন, উনার অনেক সমস্যা সবাই তা জানে, কেউ ভয়ে মুখ খুলে না। অফিসে গেলে তার দেখা কমি মেলে।
হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিষয়ে গোটা হাকিমপুর উপজেলার মানুষ জানেন, আমি আর কি বলবো। উনি অফিস ঠিক মতো করেন না। এছাড়াও গত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহেও উপস্থিত ছিলেন না। এবিষয়ে তার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আমাকে অপমান-অপদস্থ হতে হয়েছে।
অফিস সহায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ছোট কর্মচারী, উনার বিষয়ে কিছু বললে আমার অসুবিধা হবে।
সোমবার (২৪ মে) দুপুর ১২ টায় শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানার জন্য তার অফিসে গেলে, দেখা যায় আজও তিনি অফিসে উপস্থিত হননি, চেয়ার রয়েছে ফাঁকা। তার ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলে এসময় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোহান উদ্দিন বলেন মোটরসাইকেল আছি, পরে কথা বলি। পরে একাধিক বার ফোন করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন না।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ-আলম বলেন, এর আগেও এই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমান গত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উনি উপস্থিত ছিলেন না। আমি এবিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছি। তারা এবিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, আমাদের ব্যর্থতা এমন অযোগ্য অফিসার আমাদের উপজেলায় আজও অবস্থান করছেন। বিগত দিনেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধ অনেক অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এবারও তার অফিস না করা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপস্থিত না থাকার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপর মহলে জানানো হবে।
মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম।
কোন মন্তব্য নেই