Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

অন্ধ মাছ বিক্রেতা বাবু মিয়াকে অনেকেই ঠকান জাল টাকা দিয়ে

প্রতিদিন বিকেল হলেই জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের হিচমী বাজারে ১৫ বছরের ছেলে শিহাব হোসেনকে নিয়ে মাছ বিক্রি করতে আসেন অন্ধ বাবু মিয়া।  বেচা...

প্রতিদিন বিকেল হলেই জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের হিচমী বাজারে ১৫ বছরের ছেলে শিহাব হোসেনকে নিয়ে মাছ বিক্রি করতে আসেন অন্ধ বাবু মিয়া।  বেচাকেনা শেষে তিনশ’/চারশ’ টাকা লাভ হয়, যা দিয়ে স্ত্রী শিউলী বিবি, ছেলে শিহাব হোসেনকে নিয়ে কোনোমতে খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি।

তবে কোনো কোনো দিন তাকে লোকসানের ঘানি টেনে নিয়ে যেতে হয় বাড়িতে। কারণ, কিছু অসৎ মানুষ জাল টাকা দিয়ে মাছ কিনে নিয়ে যান, যা অন্ধ বাবু মিয়া কিংবা তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে শিহাব বুঝতেই পারেন না। এ কারণে মাঝে মধ্যে দু’একদিন ব্যবসা বন্ধ রাখলেও গত নয় বছরেও কারো কাছে হাত পাতেননি তিনি।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নে রাংতা গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়া এক সময় ঢাকা শহরে রিকশা চালাতেন। টাকা জমিয়ে মাসে মাসে বাড়িতে আসতেন। দুই ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করতো। স্বপ্ন দেখতেন ভালো কিছুর। কিন্তু হঠাৎ করেই হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব তার দু’টি চোখ নষ্ট করে দেয়।

তিনি জানান, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বর এলাকায় তিনি রিকশা চালাচ্ছিলেন। এক সময় হেফাজতের সদস্য ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চললে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের ধোয়া তার চোখে লাগে। পরে অনেক টাকা খরচ করলেও মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই তিনি দু’টি চোখের দৃষ্টিই হারিয়ে ফেলেন। মূলত সেই থেকেই তিনি জয়পুরহাট শহরের মাছুয়া বাজার থেকে পাইকারি দরে মাছ কিনে হিচমী বাজারে খুচরা বিক্রি করে সংসার চালান। প্রথম দিকে ভ্যান চালকদের সহায়তায় মাছ এনে বিক্রি করলেও এখন ছেলে শিহাব কিছুটা বড় হওয়ায় তাকে নিয়েই বর্তমানে ছোট পরিসরে এদোকান করছেন।

কাদোয়া কয়রা পাড়া দাখিল মাদরাসায় অধ্যয়নরত ছেলে শিহাব জানায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাদরাসায় থাকি, আর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অন্ধ বাবার সঙ্গে মাছ বিক্রি করি। মাছ বিক্রির লাভ দিয়েই কোনোমতে সংসার চালাই। কিন্তু মাঝে মধ্যে দুঃখ হয়, এ সমাজের সুস্থ সবল কিছু মানুষ আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। কেউ কেউ এক হাজার থেকে পাঁচশ’ টাকার জাল নোট দিয়ে মাছ কিনে নিয়ে যান। সে দিন কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।

জয়পুরহাট শহরের মানবাধিকার কর্মী আতাউর রহমান সন্দেশ সংগ্রামী এ মাছ বিক্রেতার গল্পে অনেকটা আবেগ আপ্লুত। তিনি বলেন, অন্ধ বাবু মিয়া আমাদের সমাজের কিছু মানুষকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। কারণ, এখন হরহামেশাই দেখা যায়, কিছু মানুষ নানা অজুহাতে অন্যের কাছে হাত পাতেন। কিন্তু দুই চোখের দৃষ্টি সারা জীবনের জন্য হারিয়েও বাবু মিয়া কারো কাছে হাত না পেতে ব্যবসা করে সংসার পরিচালনা করছেন।  

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অন্ধ বাবু মিয়ার একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড হয়েছে, যেখান থেকে প্রত্যেক তিন মাস পরপর তিনি দুই হাজার দুইশ’ টাকা করে পেয়ে থাকেন। এছাড়া মাছ বিক্রির টাকায় চলে তাদের সংসার।

শাহিদুল ইসলাম সবুজ।



কোন মন্তব্য নেই

Ads Place