জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কাশিপুর গ্রামের গৃহবধূ সেলিনার বছর দুয়েক আগেই ছিল অভাবের সংসার। দিন আনে দিন খাওয়া, তিন বেলা ঠিক মতো খাবার জুটতো না।...
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কাশিপুর গ্রামের গৃহবধূ সেলিনার বছর দুয়েক আগেই ছিল অভাবের সংসার। দিন আনে দিন খাওয়া, তিন বেলা ঠিক মতো খাবার জুটতো না। স্বামী রাইহান উদ্দিন রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। অভাবের সংসার সামলাতে হিমশিম খেতে হতো স্বামী-স্ত্রী দুই জনকেই। অভাবের সংসার সামলাতে সেলিনা তার এক আত্মীয়ের কাছে কিছু টাকা ধার নেন। সেই টাকা দিয়ে বাড়িতেই গড়ে তোলেন মুরগির খামার। এতে লাভ - লোকসান দুই ছিল। কিন্তু লোকসানের ভাগ বেশি হওয়ায় সেগুলো বাদ দিয়ে প্রায় দুই বছর আগে স্থানীয় বেসরকারি 'এসো সংস্থা' থেকে কাদাকনাথ মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করেন। এই মুরগির খামার দিয়ে মাত্র দুই বছরেই বদলে গেছে সেলিনার সংসার। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের পুষ্টি ও ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ কাদাকনাথ মুরগির খামার এখন সেলিনার বাড়িতে। কাদাকনাথ মুরগি লাভজনক হওয়ায় তার খামার ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। তার খামারে নতুন ধরনের মুরগি দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন উৎসুক মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেলিনা তার নিজ বাড়িতেই কাদাকনাথ মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারে রয়েছে বিভিন্ন জাতের মুরগি। এর মধ্যে কাদাকনাথ মুরগির পালক, চামড়া, ঠোঁট, হাড়, মাংস, নাড়িভুঁড়ি সবই কালো।
শুধু মুরগি পালনে তিনি থেমে থাকেন নি। এক দিনের বাচ্চা উৎপাদন শুরু করেছেন এই নারী উদ্যােক্তা। তার খামারে বড় ও মাঝারি মিলে কাদাকনাথ মুরগি রয়েছে ৭০ টি। এর মধ্যে ২৫ টি বড় মুরগি, ৬টি মোরগ, মাঝারি ১৯টি ও ডিমের ২০ টি মুরগি রয়েছে। প্রতিটি মুরগি গড়ে প্রায় ১৫০-১৭০টি ডিম দিয়ে থাকে। নিজস্ব ইনকিউবেটরে মাধ্যমে উৎপাদন করছেন শত শত কাদাকনাথ মুরগির বাচ্চা। পোল্ট্রি ও সোনালি মুরগির মতোই ২২ দিনেই কাদাকনাথ মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা বাহির হচ্ছে। প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ টি বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে তার খামারে। এই মুরগির চাহিদা থাকায় ১৫ দিন পর পর দু'শ টি বাচ্চা বিক্রি করছেন তিনি।
নারী উদ্যােক্তা সেলিনা বলেন, পোল্ট্রি ও সোনালি মুরগির ব্যবসায় যেভাবে লোকসান হচ্ছে তার প্রধান কারণই খাদ্যে খরচ বেশি কিন্তু এ মরগি পালনে খরচ কম। যেকোন মুরগির চেয়ে এ মুরগির ঝামেলা কম। উৎপাদন ব্যয় ও অনেক কম। কাঁচা ঘাস ও খায় এই মুরগি। অল্প বিনিয়োগে স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগের ওজন হয় সাড়ে তিন কেজি থেকে ৪ কেজি এবং মুরগির ওজন আড়াই কেজি থেকে ৩ কেজি। বড় মোরগের দাম দুই হাজার ও বড় মুরগির দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা হয়ে থাকে। কাদাকনাথ মুরগির বাচ্চার চাহিদা প্রচুর। এই খামার গড়ে তুলে আমার সংসারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। আমার খামার দেখে এলাকার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
বেসরকারি 'এসো সংস্থা' এলাকার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ভারতের মধ্যপ্রদেশের এই মুরগির বাচ্চা এলাকায় আমরাই প্রথম নিয়ে এসেছি। অল্প বিনিয়োগে স্বল্প সময়ে এই মুরগি পালনে বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়। এলাকার কর্মহীন মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ও বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে বাণিজ্যিকভাবে এই মুরগির বাচ্চা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, কাদাকনাথ মুরগি পুষ্টি ও ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ। নতুন ধরনের মুরগি হওয়াতে বাজারে এই মুরগির চাহিদা বাড়ছে।
রাব্বিউল হাসান রমি/ডেইলি জয়পুরহাট
কোন মন্তব্য নেই