Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক নান্দাইল দিঘি হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র

  কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি ঐতিহাসিক দিঘিটি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নে অবস্থিত। দি...


 

কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি ঐতিহাসিক দিঘিটি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নে অবস্থিত। দিঘির নির্মাণ ও কারুকাজ বিমোহিত করে ইতিহাস প্রেমীদের, এমনকি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি খুবই আকর্ষণীয় প্রত্নকীর্তি।


প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকায় সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে নান্দাইল দিঘি। শীতে নানা ধরনের অতিথি পাখির আগমন ঘটে নান্দাইল দিঘিতে। ঈদ উৎসবে হাজারো পর্যটকদের আগমন ঘটে এখানে। এছাড়াও পর্যটক আসে সারা বছরই।


যেভাবে যাবেন: বগুড়া-জয়পুরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে দিঘিটি অবস্থিত। বগুড়া থেকে বাসযোগে পুনট বাসট্যান্ডে নেমে অথবা জয়পুরহাট থেকে বাসযোগে পুনট বাসস্ট্যান্ডে নেমে ইজিবাইক বা অটোভ্যানে নান্দাইল দিঘিতে যাওয়া যায়।


স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন এবং নান্দাইল দিঘি ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজা নন্দলাল নাম থেকেই এই দিঘির নামকরণ নান্দাইল দিঘি হয়েছে। নান্দাইল দিঘির ইতিহাস ৪০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। করতোয়া নদী খনন করার ফলে এ অঞ্চলের পানি ওই নদীতে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাঠ, ঘাট শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যেতো এক সময়। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা নন্দালাল প্রজাকুলের চাষ ও খাবার পানির কষ্ট লাঘবের জন্য নান্দাইল দিঘি খনন করেন। কথিত রয়েছে, নন্দ রানির ইচ্ছা অনুযায়ী লাখো শ্রমিক লাগিয়ে এক রাতে দিঘিটি খনন করা হয়েছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দিঘির তলদেশে কী আছে তাও বলতে পারে না কেউ। এ দিঘির আয়তন প্রায় ১০০ একর অর্থাৎ ৩০০ বিঘা আয়তনের এই স্বচ্ছ জলরাশির সৌন্দর্য, দিঘিপাড়ের সবুজ ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন পর্যটকেরা। স্বচ্ছ জলরাশির দিঘিটি প্রায় ১ কিলোমিটার লম্বা, গভীরতাও বেশ। ২০-২৫ বছর আগেও নান্দাইল দিঘির চারদিকে ঘন জঙ্গল ও উঁচু টিলা ছিল। টিলার ওপড়ে ছিল শত প্রজাতির বনজ ও ফলদ গাছগাছালি। শীতের সময় দিঘিতে আসত অতিথি পাখি। সরকারি মালিকানাধীন এই ঐতিহাসিক দিঘিকে আশির দশকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে পর্যটন করপোরেশন নান্দাইল দিঘিতে কার্যালয় স্থাপন ছাড়াও জনবল নিয়োগ দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর উদ্যোগ থেমে যায়। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় জনবল। এরপর থেকে নান্দাইল দিঘি পাড়ের মূল্যবান গাছগাছালি লোপাট শুরু হয়। গাছ ও টিলা কেটে নির্বিচারে দখল হয় দিঘি পাড়ের জায়গা। গড়ে ওঠে লোকালয়,বসতি। হুমকির মুখে পড়ে দিঘির পাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।


দিঘিতে কালভেদে প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পাখি, বকের সারি, রাজহাঁস, কেমেল হাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির রং বেরংয়ের পাখি দেখা যায়। রাতে দিঘিটি হয়ে উঠে আরও আকর্ষণীয় ও মনোরম। চাঁদনি রাতে চাঁদের আলোতে মৃদু বাতাসে দিঘির স্বচ্ছ জলরাশি প্রকৃতি প্রেমিকদের আহ্বান জানায়।  


গাইবান্ধা থেকে মটর সাইকেল নিয়ে ঘুরতে আসা মশিউর রহমান বলেন, ‘ঐতিহাসিক এই দিঘির কথা অনেক শুনেছি। বিশাল আয়তনের দিঘির অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’


বগুড়া থেকে ঘুরতে আসা রুবেল মোল্লা বলেন, নান্দাইল দিঘির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন। দিঘির স্বচ্ছ জলরাশির অপরূপ দৃশ্য তাঁর মন মাতিয়েছে। তবে এখানে হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউস, রেস্টুরেন্ট কিছুই না থাকায় বেড়াতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন।


উপজেলার ঝামুটপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রায়হান মন্ডল বলেন, ঐতিহাসিক নান্দাইল দিঘিকে পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তুললে এখান থেকে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ও হবে। কর্মসংস্থান হবে এলাকার স্থানীয় বেকার যুবকদের।


স্থানীয় ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়াতে হলে বেদখল হওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার, প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ, নিরাপত্তাপ্রাচীর, পিকনিক স্পট, গাড়ি পার্কিং, পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার, পর্যটকদের রাত যাপনে কটেজ, এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করার জন্য একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ দরকার। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ফাঁড়ি প্রয়োজন। 


এ বিষয়ে কালাই উপজেলার চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী নান্দাইল দিঘির পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্প্রতি সরকারি নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিঘিতে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এর জলরাশি স্বচ্ছ রাখা, পর্যটকদের সুবিধার্থে একটি ঘাট নির্মাণ এবং বিশ্রামাগার কাম রেস্টহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। দিঘির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মেশিন চালিত স্পিডবোট ও নৌকা রয়েছে। নান্দাইল দিঘির এসব উন্নয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার নান্দাইল দিঘির পরিকল্পিত উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।


রাব্বিউল হাসান রমি/ডেইলি জয়পুরহাট

কোন মন্তব্য নেই

Ads Place